গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পাবনার ভাঁড়ারায় লাঠি খেলার আয়োজন

Date: 2025-10-31
news-banner

পাবনা সংবাদদাতা:

ঢাক-ঢোল ও কাসার বাদ্যের তালে নাচছে লাঠিয়ালরা। বিশেষ লাঠির কসরতে চলছে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ—রক্ষা ও প্রতিহতের চমকপ্রদ লড়াই। এ যেন লড়াই আর মুগ্ধতার এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। আর সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমিয়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষ।

গ্রামীণ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের স্লুইসগেইট এলাকায় আয়োজিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন।

স্থানীয়রা জানান, একসময় ভাঁড়ারা ছিল ভয় ও আতঙ্কের নগরী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন সেখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে লাঠি খেলা, পালাগানসহ নানান ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাক-ঢোলের বাজনা ও গানের তালে তালে লাঠিয়ালরা লাঠি ঘুরিয়ে চালাচ্ছেন আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। প্রতিপক্ষের আঘাত থেকে বাঁচতে কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কসরতের তালে তালে। দর্শকেরা হাততালি ও হর্ষধ্বনিতে উজ্জীবিত করছেন খেলোয়াড়দের।

ব্যাপক জনসমাগমকে ঘিরে আশপাশে বসেছে নাগরদোলা, শিশুদের বিভিন্ন রাইড, খেলনা ও খাবারের বাহারি দোকান। পুরো এলাকা যেন রূপ নিয়েছে এক উৎসবমুখর মেলায়।

আয়োজকরা জানান, আশপাশ ও দূর-দূরান্তের সাতটি লাঠিয়াল দল খেলায় অংশ নেয়। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান শেষে লাঠিয়াল ও গ্রামবাসীর জন্য আয়োজন করা হয় প্রীতিভোজের। দীর্ঘদিন পর এমন ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন আগত দর্শনার্থীরা।

খেলা দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মালিথা বলেন,

“ছোটবেলায় নিয়মিত লাঠি খেলা দেখতাম। দিনের কাজ শেষে রাতে আয়োজন হতো এসব খেলার। কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। অনেক দিন পর এমন আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে।”

অংশগ্রহণকারী লাঠিয়াল কামরুজ্জামান, মোমিন খাঁ ও হাসেম বলেন,

“লাঠি খেলা শুধু বিনোদন নয়—এটি শরীর ও মনের অনুশীলন। এর মাধ্যমে সবাই সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা গড়ে ওঠে। তরুণ প্রজন্ম এসব ঐতিহ্য ভুলে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের আয়োজন বেশি বেশি হওয়া উচিত।”

আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠি খেলা আবারও মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল গ্রামীণ সংস্কৃতির মাটির টানে ও মিলনমেলায়।

advertisement image

Leave Your Comments