অনলাইন ডেক্স: 
বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা রুমা থানা শহর থেকে ২২ 
কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপরে। এই ট্রেনিং ক্যাম্পটি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন
 ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মিদের 
(কেএনএ)। সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা কেএনএফের নিয়ন্ত্রণে :রুমা, 
রোয়াংছড়ি ও থানচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনী গত তিন বছরে 
কেএনএ-এর অন্তত ১০টি ঘাঁটি অভিযান চালিয়ে দখল করে নিয়েছে। দুর্গম পাহাড়ের 
ঢালে কেএনএ একাধিক সামরিক পরিখা খনন করে অবস্থান নেয়। পাহাড়ে ঘন জঙ্গলের 
কারণে বাইরে থেকে বোঝারও উপায় নাই।
ওইখানে বাড়ি থেকে কিশোর-তরুণদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর উঁচু পাহাড়ের 
ওপর গহীন জঙ্গলে ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নিতে বাধ্য করা হয় তাদের। শুরু হয় 
শারীরিক কসরত। কমব্যাট ট্রেনিং নিতে হয়। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কৌশল রপ্ত 
করে তারা। উঁচু পাহাড়ের ওপর ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে কখনো কখনো গুলির শব্দ 
পাওয়া যায়। দুই পাহাড়ের ভাঁজে বসবাস করা পাহাড়ি-বাঙালিরা বুঝতে পারে যে, 
ওখানে ট্রেনিং হচ্ছে। এভাবেই ট্রেনিং সম্পন্ন করার পর তারা পরিধান করে 
জলপাই রঙের অ্যাম্বুস প্রকৃতির ছাপা শার্ট-প্যান্ট, ক্যাপ ও জ্যাকেট। পায়ে 
থাকে বুট জুতা। তাদেরকে সেনাবাহিনীর আদলে পদবি দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন, মেজর, 
লেফট্যানেন্ট কর্নেল এবং কর্নেল। ট্রেনিং নেওয়া এই দলটির প্রধানের পদবি 
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজেলা বর্তমানে 
কুকি-চিনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। মিজোরাম সীমান্ত থেকে 
অস্ত্র এনে এই এলাকার মাধ্যমে রুমা ও থানচিতে পাঠানো হয়। রাতের আঁধারে 
হেঁটে বা মোটরসাইকেলে করে অস্ত্রের চালান নেফিউ পাড়া, বাকলাই, তাজিংডং, 
কেওকারাডং, বগালেক হয়ে রুমার বিভিন্ন পাহাড়ে কেএনএয়ের ঘাঁটিতে পৌঁছে যায়। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছু স্থানীয় সহযোগী এই কাজে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে। থানচি উপজেলার গহীন বনে এবং বাঙালি জনবসতি থেকে দূরের
 এলাকাগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপদ অস্ত্র মজুতকেন্দ্র। বিশেষ করে 
রেমাক্রি, ডিম পাহাড়, তিন্দুর বাজার, নাফাখুম, ছোট মোদক, বড় মোদকসহ মাইলের 
পর মাইল জুড়ে পাহাড়ে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব 
স্থানে আরাকান আর্মিদের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। থানচি থেকে নীলগিরি, 
চিম্বুক, ওয়াই জংশন হয়ে আরাকান আর্মিদের কাছে থেকে অস্ত্রের চালান রুমাতে 
কেএনএয়ের ঘাঁটিতে চলে আসে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্যের সংঘাতের মধ্য দিয়ে 
কুকি-চিন ও আরাকান আর্মি বহুবার জান্তা বাহিনীর অস্ত্রাগার দখলে নিয়েছে। এই
 অস্ত্রের একটি অংশ পরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়। কুকি-চিনরা 
মূলত আরাকান আর্মির সঙ্গে মিত্র হিসেবে কাজ করে এবং অস্ত্র বিনিময়, 
প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করে।