অনলাইন ডেস্ক:
গত আওয়ামী লীগ
সরকারের সময়ে সংসদ সদস্যদের (এমপি) নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য নেওয়া হয়েছিল ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন-২’ প্রকল্প, যা
জনপ্রিয়ভাবে পরিচিত ছিল ‘এমপি প্রকল্প’ নামে। বর্তমানে দেশে কোনো সংসদ সদস্য না থাকলেও প্রকল্পটির
ব্যয় ৩৯ শতাংশ বাড়ানোর
প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), যা নিয়ে নানা
প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হয়, প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,০৮২ কোটি
টাকা। এখন নতুন প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে ১,৫০০ কোটি
টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে-অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে ৪১৮ কোটি টাকা, যা মূল অনুমোদিত
ব্যয়ের তুলনায় ৩৮.৬৪ শতাংশ
বেশি। প্রকল্পের অগ্রগতি ও নতুন প্রস্তাব।
প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালে, কিন্তু এলজিইডি প্রস্তাব করেছে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে
২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করার।
প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ কাজ
ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৭০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, অথচ আগামী দেড় বছরে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
র্অর্ন্তবতী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল-যেসব কাজ প্রায় শেষ, তা দ্রুত সম্পন্ন
করতে হবে; আর যেসব কাজের
দরপত্র হয়নি, সেগুলো বাতিল করা হবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে উল্টো
ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর
প্রস্তাব উঠেছে।পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, এই সরকারের দায়িত্ব
নেওয়ার পর প্রকল্পটি আগের
বরাদ্দেই শেষ করা সম্ভব ছিল। তাঁর ভাষায়, যদি আগের পরিকল্পনামাফিক চলত, তাহলে প্রকল্পটি ৭০০ কোটিতেই শেষ হয়ে যেত। এখন হঠাৎ করে কেন ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।”
আইএমডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের শুরুতে বরাদ্দ বেশি থাকলেও পরে যথাযথ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজের
গতি কমে যায়। এ কারণেই বাস্তবায়নকাল
ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এলজিইডি।
বিভিন্ন জেলায় বরাদ্দের বৈষম্য-নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়, ৫১ কোটি ৫০
লাখ টাকা, আর সবচেয়ে কম
বরাদ্দ মেহেরপুর জেলায় মাত্র ৫ কোটি টাকা।
বরাদ্দে এই বৈষম্য নিয়েও
প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সাবেক কর্মকর্তাদের মতামত-
প্রকল্পের সাবেক পরিচালক নাজমুল করিম বলেছেন,“স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সরকারের নির্দেশেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান
বিভাগের সাবেক সদস্য ড. নেয়ামত উল্লাহ
ভূঁইয়া আগেই মন্তব্য করেছিলেন,“এই প্রকল্পের আওতায়
নতুন করে আর কোনো স্কিম
অনুমোদন করা হবে না।”
প্রশ্ন রয়ে গেল- বর্তমানে যখন এমপি নেই এবং র্অর্ন্তবতী সরকার ব্যয়সংকোচনের নীতি নিয়েছে, তখন একটি বন্ধ হতে যাওয়া প্রকল্পে হঠাৎ ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব কেন  সেটিই
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।