অনলাইন ডেক্স:
আগামী চার-পাঁচ দিন অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন
প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফরের)
চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৩টি দল এবং একটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন তিনি।
যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও জাতীয় পার্টির
(কাজী জাফরের) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “আমি আনন্দের সাথে
ঘোষণা করতে চাই- প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের
মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট সময়সীমা, তারিখ উনি (মুহাম্মদ ইউনূস)
ঘোষণা করবেন।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি
শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে
রেখেছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের
সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার ধারাবাহিক আলোচনার তৃতীয়
দিনে প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা নিয়ে বার্তা এল। রাজধানী ঢাকার দিয়াবাড়িতে গত সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে
বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে পরদিন ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী
আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন
প্রধান উপদেষ্টা। পরদিন এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ১২টি দল ও একটি
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারপ্রধান।
এরপর শনিবার ১৩টি দল ও একটি জোটের সঙ্গে যমুনায় ঘণ্টাব্যাপী সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “এর চাইতে আনন্দের
বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আজকের মূল বিষয় হচ্ছে এইটা। আজকে দেশব্যাপী যে
সমস্যা, নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। এর সমাধানের একমাত্র পথ
নির্বাচন, এটা উনি (প্রধান উপদেষ্টা), ওনার বক্তব্যে সুস্পষ্ট করেছেন। উনি
আশ্বাস দিয়েছেন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে উনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা
করবেন।”
বৈঠক থেকে বের হয়ে এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক
আন্দোলন-এনডিএম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, “প্রধান
উপদেষ্টা আমাদেরকে জানান, আগামী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে জুলাই সনদের সাথে
নির্বাচন কবে হবে এবং প্রক্রিয়া কী হবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে ওনার
(প্রধান উপদেষ্টা) তরফ থেকে জাতির জন্য পরিষ্কার করে জানানো হবে।
”প্রধান উপদেষ্টা আজকে আমাদের সাথে মিটিংয়ে বসে আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা
করেছেন কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখসহ সব কিছু জাতির সামনে তুলে
ধরবেন।”
নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা তার প্রত্যাশার কথা আবারও এদিনের বৈঠকে তুলে ধরেছেন, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “পুরো দেশবাসীকে নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়ার জন্য বলেছেন।
আজকের আলোচনায় সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে, এগুলো
কারা কীভাবে করছে, এগুলো কীভাবে আমরা দমন করতে পারি- এগুলো নিয়ে আমাদের
সহযোগিতা চেয়েছেন।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম
আফেন্দী বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা মূলত আমাদের কাছে বর্তমান সংকটের কথা তুলে
ধরেছেন। পাঁচ অগাস্টের আগে আমরা যেমন সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ ছিলাম সেটা যেন
আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি সেটা বলেছেন। কোনাভাবে পরাজিত শক্তি যেন মাথা চাড়া
দেওয়ার সুযোগ না পায়।
“অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাই এটা বলেছেন। ’একটি
নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু সর্ব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনে দিকে অগ্রসর
হতে চাই’- এই লাইনে তিনি (ইউনূস) কথা বলেছেন।”
বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু
বিশ্বাস, নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ
খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয়
দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন, জাকের পার্টির
শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী
জনশক্তি পার্টির রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর
রহমান ইরান, বাসদ-মার্কসবাদীর মাসুদ রানা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের
মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
এর আগে গত বুধবার দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন
যমুনায় ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগের দিন রাতে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।