কুমিল্লা সংবাদদাতা: 
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পিয়ারাতলীতে এখন প্রযুক্তির
এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এখানকার অর্ধশিক্ষিত নারীরা এখন মোবাইল ফোন তৈরি করছেন,
যা শুধু দেশের বাজারে নয়, বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রযুক্তির এই বিপ্লব ঘটেছে স্থানীয়
প্রতিষ্ঠান হালিমা টেলিকম-এর মাধ্যমে, যেখানে প্রায় ২০০ নারী দক্ষ কারিগর হিসেবে কাজ
করছেন।
এই উদ্যোগের পেছনে আছেন উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগর,
যিনি একসময় হোটেলে কাজ করতেন। পরে, অল্প পুঁজি নিয়ে ঢাকায় মোবাইল রিচার্জ কার্ড বিক্রি
শুরু করেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও তিনি কখনোই
হাল ছাড়েননি। ২০১০ সালে কুমিল্লায় ফিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হালিমা টেলিকম, এবং চীনে
গিয়ে বাটন মোবাইলের যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে শুরু করেন মোবাইল ফোন উৎপাদন।
প্রথম দিকে কিছু লোকসান হলেও আবুল কালাম হাসান টগর সঠিক
প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদন শুরু করেন। তার কঠোর
পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, হালিমা ব্র্যান্ডটি বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এখন পিয়ারাতলীর কারখানায় নারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মোবাইল
ফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি এবং জোড়া লাগাতে। শিউলি আক্তার ও ফারজানা, দুই কর্মী
জানান, ‘প্রথমে কিছুই জানতাম না, কিন্তু তিন মাসের প্রশিক্ষণের পর এখন আমরা পুরো মোবাইল
তৈরি করতে পারি। অনেক সময় বাড়িতেও কাজ করি।’
এছাড়া, হালিমা টেলিকমের সেলস অ্যাডমিন ওমর হাসান জানান,
‘এই নারীরা আগে কোনো কাজ জানতেন না, কিন্তু এখন তারা মোবাইল ফোন তৈরি করছেন এবং নিজের
পরিবারে আয় রোজগারে ভূমিকা রাখছেন।’
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল কালাম হাসান টগর বলেন,
‘একসময় হোটেল বয়ের কাজ করতাম, এখন আমার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১,৪০০ জন কাজ করছেন,
তাদের ৯৫ শতাংশই নারী। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এখন দক্ষ কর্মী হয়ে উঠেছেন এবং তাদের
আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।’
পিয়ারাতলী এখন কুমিল্লার ‘মোবাইল তৈরির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত।
এখানকার নারীরা প্রযুক্তির সহায়তায় নিজেদের জীবন বদলে দিয়েছেন এবং তাদের কাজ থেকে উৎসাহিত
হয়ে গ্রামটি উন্নয়নের একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।